জাতীয় শিক্ষক ফোরামের পরিচিতি

উপক্রমণিকা

পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানিত ও মহিমান্বিত, উত্তম এবং উৎকৃষ্ট পদমর্যাদা হল শিক্ষকতা। এ মহান দায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনিই শিক্ষক। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল উম্মাতকে দীনের শিক্ষা প্রদান। যেমনটি তিনি ইরশাদ করেন,“নিশ্চয় আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি” (সুনানে দারেমী)। আমরা বিশ্বাস করি, আদর্শ ও দক্ষ জাতিগঠন ছাড়া মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ আসতে পারে না। এ মহান দায়িত্ব পালনে শিক্ষকগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠন, উন্নত সভ্যতা ও সোনালী সমাজ বিনির্মাণে একজন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে তাদের ভূমিকাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আদর্শ শিক্ষা ও শিক্ষকসমাজই জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে পারেন। অতিব দুঃখের বিষয় , জাতি আজ প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা খাতকে চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধর্মহীন করার নীল নকশাঁ বাস্তবায়নে, সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন শ্রেণীতে ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক করা সহ বিদ্যমান শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অধ্যায়ে ‘সেক্যুলার’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যসূচি থেকে কুরআন, হাদীস,আরবি, ফিক্হ, তথা ইসলামী শিক্ষা ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে। কওমী মাদরাসা শিক্ষা নিয়েও ষড়যন্ত্র আব্যাহত রয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা সমাজে অবহেলিত ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার শিক্ষক সমাজ অধিকার আদায়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। জাতি হিসেবে আমরা কখোনই তা আশা করিনি। শিক্ষকদের প্রকৃত মূল্যায়ন ও যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা ছাড়া জাতির সার্বিক কল্যাণ এবং মুক্তি সুদূর পরাহত।
অতএব, শিক্ষকদের মর্যাদা, কল্যাণ ও অধিকার আদায় এবং প্রকৃত শিক্ষা চর্চা ও লালনে শিক্ষকসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।

সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ!
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে।
(i) সাধারণ শিক্ষা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়
(বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যম) (ii) মাদ্রাসা শিক্ষা (আলিয়া, কওমিয়া) (iii) কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা। এ তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় লক্ষ,লক্ষ শিক্ষক শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। সর্বশ্রেণীর শিক্ষকদের একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,সচেতন দীনদার বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক পীর-মাশায়েখের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সালের ১৬ই জানুয়ারী শুক্রবার জাতীয় শিক্ষক ফোরাম-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে এ মহান কাজ অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

লক্ষ্য
শিক্ষক সমাজের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও দক্ষ জাতিগঠনে সহযোগিতা করা এবং কর্মমুখী সর্বজনীন আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রচার-প্রতিষ্ঠা ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা।
উদ্দেশ্য
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন।

কর্মসূচি
১. শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষকদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত দাবি তুলে ধরা ও সার্বিক কর্মসূচি গ্রহণ।
২. আদর্শ ও দক্ষ জাতিগঠন
জাতীয়ভাবে কল্যাণের লক্ষ্যে আদর্শ ও দক্ষ জাতিগঠনে প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী সর্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার আলোকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
৩. শিক্ষার উন্নয়ন
বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা দূরীকরণ এবং যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালানো।

৪. প্রশিক্ষণ
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈতিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এর আয়োজন করা ।
৫. সমাজকল্যাণ
যে কোন দুর্যোগে এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের সহায়তার লক্ষ্যে কল্যাণফান্ড (অলাভজনক) গঠন ও সকল শ্রেণীর শিক্ষকদের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ।
৬. শিক্ষা ফাউন্ডেশন
(র) শিক্ষা ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠা গড়ে তোলা ।
(রর) দেশের অসহায়, এতিম, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি/উপবৃত্তি প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করা।
সদস্য হওয়ার নিয়মাবলী
জাতীয় শিক্ষক ফোরাম এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মসূচিরসাথে একমত পোষণ করে যে কোন শিক্ষক নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে সদস্য হতে পারবেন।

দৈনন্দিন কর্মসূচি
১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করা। কুরআন তিলাওয়াত, হাদীস অধ্যয়ন ও জিকির আজকারের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো।
২. নিয়মিত বই পড়া, বিশেষ করে শিক্ষাসংক্রান্ত বই-পুস্তক, জার্নাল, পত্র-পত্রিকা, ইসলামি সাহিত্য পাঠের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
৩. দৈনন্দিন দাওয়াতী আমলের পাশাপাশি মাসে কমপক্ষে ৪ জন শিক্ষককে সদস্য করা ।
৪. শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোন কাজের ব্যাপারে সর্বদাই সতর্কতা অবলম্বন করা।
৫. জাতীয় শিক্ষক ফোরাম-এর কাজ নিয়মিত আঞ্জাম দেয়া।

সাংগঠনিক কাঠামো
জাতীয় শিক্ষক ফোরাম-এর সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ-
ক. উপদেষ্টা ফোরাম
খ. মজলিশে শুরা বা পরামর্শ ফোরাম
গ. কেন্দ্রীয় ফোরাম
ঘ. কার্যনির্বাহী ফোরাম
দেশের প্রতিটি জেলা/মহানগর, উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে ৩ স্তরের কমিটি থাকবে।

সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ!
মনীষীদের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত যে, একটি উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্রের রূপরেখা শিক্ষক ব্যতীত কল্পনাতীত। কেননা শিক্ষার্থীদেরকে ব্যক্তিগত, সামাজিক শিক্ষা ও দীক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আর্দশ মানুষ গড়ে তুলতে শিক্ষকরা প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। আর আর্দশ মানুষই কল্যাণধর্মী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক। অতএব, আর্দশ মানুষ ও সমাজ গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজের সম্প্রীতি, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন !

Scroll to Top

সদস্য হতে নিচের ফরম পূরণ করুন